নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুশফিকুর রহমান আশিকের বিরুদ্ধে  যৌন হয়রানি , মার্ক টেম্পারিং,নিজের পক্ষে গণস্বাক্ষর দিতে অর্থ প্রদান, স্বাক্ষর জালিয়াতি, শিক্ষার্থীদের হুমকি প্রদান, পরীক্ষার আগে প্রশ্ন সরবরাহ সহ ৪০টি লিখিত অভিযোগ করেছে বিভাগের ২০১৭-১৮,২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড.নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বরাবর এই অভিযোগ জমা দেয় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।অভিযোগ তদন্তে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।এছাড়াও এই অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে শিক্ষা বিভাগের ১৫০ জন শিক্ষার্থী গণস্বাক্ষর দিয়েছে।

অভিযুক্ত শিক্ষক মুশফিকুর রহমান আশিকের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো নিচে দেওয়া হলো।২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থীদের  অভিযোগসমূহঃ-

নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদেরকে রাত ৮.০০-৮.৩০ টা পর্যন্ত ভয়ভীতি (পরীক্ষার ফলাফলের) প্রদর্শনের মাধ্যমে তার নিজস্ব অফিস কক্ষে বসিয়ে রাখতে বাধ্য করা।অনলাইন পরীক্ষার ভাইভা বোর্ডে মেয়ে শিক্ষার্থীদের অশালীন প্রশ্ন করা।নিজের পছন্দের শিক্ষার্থীকে দিয়ে একই ব্যাচের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ফলাফল রেজাল্ট শীটে লিপিবদ্ধ করা।শ্রেণীকক্ষে থাকার থেকে শিক্ষকদের রুমে থাকলে সিজিপিএ ভালো করা যায়। এ ধরণের বিভিন্ন কথা বলা।মার্কস বাড়িয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্নভাবে অশালীন ও অনৈতিক ইঙ্গিত প্রদান করা।

পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তার পছন্দের শিক্ষার্থীদের অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা।শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে এবং শ্রেণিকক্ষে সরাসরি হুমকি প্রদান করা এবং অপমান, অপদস্ত, লাঞ্ছিত করা, যার কারণে অনেক শিক্ষার্থী এসব মেনে নিতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন, এমনকি বহুবার আত্মহত্যার কথাও চিন্তা করেছে।প্রকাশ্যে মেয়ে শিক্ষার্থীদেরকে হুমকি দেয়া, যে তাঁর (ওই শিক্ষকের) রুমে কারণে বা অকারণে বসে না থাকলে পরীক্ষায় মার্কস দেওয়া হবে না। এমনকি এটি লক্ষণীয় যে যেসব মেয়েরা তার রুমে বসে থাকে কারণে বা অকারণে তাদের রেজাল্টের সাথে যারা তার রুমে বসে থাকেন না তাদের রেজাল্টের অনেক পার্থক্য। যা পূর্ববর্তী কয়েকটি সেমিস্টারের ফলাফল পর্যবেক্ষণ করলেই স্পষ্টভাবে বুঝা যায়।শিক্ষার্থীদের সামনে এবং শ্রেণীকক্ষে বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকদের এমনকি চেয়ারম্যানকে নিয়েও বাজে মন্তব্য এবং কটুক্তি করা।

ক্লাস টেস্ট এবং ব্যবহারিক পরীক্ষাসহ অ্যাকাডেমিক বিভিন্ন বিষয়ে পক্ষপাতিত্বপূর্ণ আচরণ করার মাধ্যমে তার পছন্দের শিক্ষার্থীদের বেশি নম্বর প্রদান করেন যা সর্বশেষ পরীক্ষার ফলাফলে সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে।অভ্যন্তরীণ ভাইভা ও প্রেজেন্টেশনে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ব্যক্তিগত ইস্যু টেনে এনে অপমান-অপদস্ত করা।

বোরকা পরে প্রেজেন্টেশন অথবা ভাইভা দেওয়ার কারণে তার কাছে অনেক শিক্ষার্থী হেনস্তার শিকার হয়েছে।একটি সেমিস্টারে একাধিক কোর্স পাওয়ার ফলে স্বেচ্ছাচারিতার পরিমাণ বেড়ে যায়। বিভাগীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিভিন্ন সিটি, প্রেজেন্টেশন, অ্যাসাইনমেন্টের নম্বর নিজের ইচ্ছেমতো বণ্টন করেন।পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে, শিক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়ন করে পরীক্ষা চলাকালীন সময়েই ফলাফল প্রদান করেন এবং শিক্ষার্থীদের এক্সাম হলে ফলাফলের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিরূপ মন্তব্য করে থাকেন তিনি।

পরীক্ষার আগের রাতে তাঁর পছন্দের শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা। পরীক্ষার হলে পছন্দের শিক্ষার্থীকে এমনকি উত্তর বলে দেওয়া।বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিউএসি কর্তৃক পরিচালিত ‘শিক্ষক মূল্যায়ন’ প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ভয়-ভীতি প্রর্দশন করার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করা হয়, যাতে করে শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্য প্রদান করতে না পারে।

২০১৮-১৯ সেশনের  শিক্ষার্থীদের অভিযোগ গুলো হলোঃ

আমাদের শ্রেণিকক্ষে এবং পরীক্ষার হলে তিনি সরাসরি হুমকি প্রদান করেন এবং অপমান-অপদস্ত করেন যে কারণে আমরা এসব মেনে নিতে না পেরে পরীক্ষার হলে এবং শ্রেণিকক্ষে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি।এছাড়া পরীক্ষার হলে প্রচুর পরিমাণে আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগি ও পাশাপাশি আত্নহত্যার মত চিন্তা করতে ও বাধ্য হই।Y-3,T-1 এ পাঁচটির মধ্যে চারটি কোর্সের দায়িত্ব একই শিক্ষকের নিকট থাকায় স্বেচ্ছাচারিতার মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল, ব্যবহারিক ও ক্লাস টেস্ট পরীক্ষায় পক্ষপাতিত্ব মূলক আচরণের স্বীকার হই আমরা। একাধিক কোর্সের ভয় দেখিয়ে তিনি এটা ও বার বার ঘোষণা করেন যে তিনি যেখানেই যাবেন Dictatorial Democracy কায়েম করবেন।

তত্ত্বীয় পরীক্ষার পরপরই জোরপূর্বক ব্যবহারিক পরীক্ষা চাপিয়ে দেয়া হয়। (উল্লেখ্য এরকম পরিস্থিতিতে অনেক শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে অপারগ হয়)।ক্লাসে বাবা মা নিয়ে খুবই অশালীন ভাষায় গাল মন্দ করা হয়।শিক্ষার্থীদের সামনে এবং শ্রেণীকক্ষে বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকদের এমনকি চেয়ারম্যানকে নিয়েও বাজে মন্তব্য এবং কটুক্তি করেন ও নিজের অতীত কর্মকান্ড সম্পর্কে শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করা।নির্দিষ্ট কোন কারণ ছাড়াই শিক্ষার্থীদের কে রাত আটটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত বিভিন্ন ভয়-ভীতি (পরীক্ষার ফলাফল সংক্রান্ত) প্রদর্শনের মাধ্যমে তার নিজস্ব অফিস কক্ষে থাকতে বাধ্য করেন।তার সৃষ্টিকৃত টার্ম “ম্যারাথন ক্লাস” এর নামে একটি ক্লাস ৪-৬ ঘন্টা পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করার বহু উদাহরণ রয়েছে এবং ক্লাসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের বিনা কারণে জোরপূর্বক দাঁড় করিয়ে রাখেন।

ব্যবহারিক পরীক্ষায় অযৌক্তিক, অবান্তর, অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করা।মেয়ে শিক্ষার্থীদের জরুরী প্রয়োজন হওয়া সত্বেও ওয়াসরুমে যেতে না দেয়া ।পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তার পছন্দের শিক্ষার্থীদের অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান ও পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে, শিক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়ন করে পরীক্ষা চলাকালীন সময়েই ফলাফল প্রদান করেন এবং শিক্ষার্থীদের এক্সাম হলে ফলাফলের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিরূপ মন্তব্য করে থাকেন তিনি।নিজের পছন্দের শিক্ষার্থীদের দিয়ে একই বিভাগের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ফলাফল রেজাল্ট শীটে লিপিবদ্ধ করেন।ক্লাস টেস্ট এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা সহ একাডেমিক বিভিন্ন বিষয়ে পক্ষপাতিত্বপূর্ণ আচরণ করার মাধ্যমে তার পছন্দের শিক্ষার্থীদের বেশি নম্বর প্রদান করেন যা সর্বশেষ পরীক্ষায় তা সর্বাধিক পরিলক্ষিত হয়।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টির মাধ্যমে প্রতিহিংসা ও বিভেদ তৈরি করেন।শ্রেণিকক্ষে ধর্মীয় অনুশাসন মান্যকারীদের প্রকাশ্যে অবমাননা ও তামাশা করেন।প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দায়ের করার পর রাত থেকেই আমাদের চেয়ারম্যান, ডীন ও সাংবাদিক সমিতি বরাবর উক্ত অভিযোগের বিরুদ্ধে পাল্টা আবেদন করার নির্দেশ দেন এবং শিক্ষার্থীদের তার পক্ষে স্বাক্ষর প্রদানের নির্দেশনা দেন। (উল্লেখ্য চা নাস্তা বাবদ অর্থ প্রদান করেন )

২০১৯-২০ সেশনের  শিক্ষার্থীদের অভিযোগ গুলো হলোঃ

কোনো ধরনের বিষয় উল্লেখ না করে সাদা পাতায় শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর গ্রহণ এবং শিক্ষার্থীদের অজ্ঞাতসারে স্যারের আত্মপক্ষ সমর্থনে তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি।শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার হল, শ্রেণীকক্ষসহ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন উছিলায় মানসিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা।অনলাইন ভাইভা বোর্ডে মেয়েদের সাথে হয়রানিমূলক আচরণ করা।

অপছন্দের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে এবং নিজ অফিসে ডেকে নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং অশোভন আচরণ।শিক্ষার্থীদের ছোট করে বিভিন্ন ধরনের আক্রমণাত্মক কথা বলে নিরুৎসাহিত করা। এটা তাদের বরবার বোঝানো যে, তাদের দ্বারা ভবিষ্যতে কোনো কিছু করা সম্ভব না এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ।শিক্ষার্থীদের প্ররোচিত করে গ্রুপিং সৃষ্টি করা।

অপছন্দের শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রচন্ড আক্রমণাত্মক আচরণ।বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষকদের নিয়ে কটুক্তি এবং ব্যঙ্গাত্মক মনোভাব প্রকাশ করা।সেমিস্টার (২.১ ) ফাইনালের ১ সপ্তাহ পূর্বে সাইন্সস্টিমে Zoology 1 কোর্সে ২ টা সিটি  একইদিনে শেষ করেন সবগুলো ইউনিটের উপর। তারপর দিন Botany 1 এর ২ টা সিটি নেন। এতে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং রেজাল্টে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তা সিটি  মার্ক পর্যালোচনা করলে বোঝা যাবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মুশফিকুর রহমান আশিক বলেন, আমি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি। সবার মতো আমারো তো পরিবার আছে। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো উদ্দেশ্য প্রণোদিত।খুব বিব্রতকর অবস্থায় আছি আমি। আমার আশংকা হচ্ছে আমাকে বারবার বিব্রত অবস্থায় ফেলতে অভিযোগ গুলো আসতেছে। এখানে কারো লুকায়িত হীন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে।